SLL:48) নতুন বাজেটে (২০২২) রিটার্ন জমায় যেসব পরিবর্তন ঘটল।

প্রতিবারই ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন জমায় কিছু কর ছাড় দেওয়া হয়, আবার কর আরোপ হয়ে থাকে। এবারের বাজেটেও সেই রকম নরম-গরম কিছু শর্ত রয়েছে।
ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়েনি।
দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে টিআইএন লাগবে, রিটার্নও দিতে হবে।
তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদধারীদের আয় না থাকলে সারচার্জ নেই।
কর রেয়াত নেওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সীমা এক কোটি টাকায় নামল।
প্রত্যেক কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএনধারীর জন্য বছর শেষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক। প্রতি অর্থবছরে, অর্থাৎ চলমান বছরের জুলাই থেকে পরের বছরের জুন মাস পর্যন্ত এক বছরে কত আয়-ব্যয় হলো, তার ভিত্তিতেই কর দিতে হয়।
এদিকে প্রতিবছরই বাজেটে আয়কর ও রিটার্ন জমায় কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। এসব পরিবর্তন দেখেই রিটার্ন জমা দিতে হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার সংসদে যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তাতেও কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে।
আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রিটার্ন দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এবারে করদাতাদের গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আয়ের ওপরই কর দিতে হবে।
চলুন, অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে আয়কর ও রিটার্নের ক্ষেত্রে কী কী পরিবর্তন এনেছেন, তা দেখে নেওয়া যাক। প্রথমেই বলা যায়, সাধারণ করদাতাদের জন্য এবার সুখবর নেই। করোনাকালে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের আয় কমে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও মন্দা। এই অবস্থায় অনেকেই আশায় ছিলেন, ব্যক্তিগত আয়ের করমুক্ত সীমা বাড়ানো হবে। কিন্তু করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই বার্ষিক তিন লাখ টাকায় বহাল রয়েছে। ফলে যাঁদের করযোগ্য আয় তিন লাখ টাকার বেশি থাকবে, তাঁদের কর দিতেই হবে।
মনে রাখবেন, সাধারণ করদাতাদের জন্যই কেবল করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতাদের বার্ষিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আয় পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত।
মনে রাখবেন, সাধারণ করদাতাদের জন্যই কেবল করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। নারী, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী প্রবীণ করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী করদাতাদের বার্ষিক আয় সাড়ে চার লাখ টাকা ও গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের আয় পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতা–মাতা বা আইনগত অভিভাবকেরা আরও ৫০ হাজার টাকা ছাড় পাবেন। অর্থাৎ তাঁদের করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। এদিকে নতুন বাজেটে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের করমুক্ত আয়সীমা করা হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা।
আবার টিআইএন থাকলে মোটা দাগে সবাইকে করযোগ্য আয় না থাকলেও রিটার্ন দিতে হবে। শুধু জমি বেচাকেনা ও ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার জন্য যাঁরা টিআইএন নিয়েছেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই, তাঁরা ‘মাফ’ পাবেন।
একজন করদাতা এত দিন আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কিংবা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন। নতুন বাজেটে এই সীমা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। তাই রিটার্ন দেওয়ার সময় নতুন পরিবর্তনটি খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে।
ধরা যাক, বহু বছর আগে আপনি রাজধানীর আশপাশে কোথাও একটি জমি কিনেছেন, এখন সেখানে বাড়ি করতে চান। কিন্তু আপনি যখন নকশা অনুমোদন করাতে যাবেন, তখন রাজউক বা অন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আপনার টিআইএন আছে কি না জানতে চাইবে। টিআইএন না থাকলে বাড়ির নকশা পাস করানো যাবে না। বাড়ির কাজ শুরু করতে চাইলে নকশা অনুমোদন পর্যায়েই আপনি টিআইএনধারী হয়ে যাবেন। বছর শেষে রিটার্নও দিতে হবে।
সংসারের খরচ মিটিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করেন অনেক করদাতা। এই সঞ্চয়ের টাকা অলস ফেলে না রেখে সঞ্চয়পত্রসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে রাখেন। সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজার, বন্ড, প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যায়। এ জন্য অনেকে করের বোঝা কমাতে আয় হবে, এমন কোথাও বিনিয়োগ করেন। এবার কিন্তু হিসাব ভিন্ন হবে।
একজন করদাতা এত দিন আয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কিংবা দেড় কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারতেন। নতুন বাজেটে এই সীমা কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে। তাই রিটার্ন দেওয়ার সময় নতুন পরিবর্তনটি খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে।
দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে টিআইএন নিতেই হবে। অবশ্য একটু ঘুরিয়ে বলা যায়, কেউ যদি দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনেন, তাহলে রিটার্ন জমা দিতে হবে। কারণ, টিআইএন থাকলে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
রিটার্নে ধনীদের করের বাইরে বাড়তি কিছু টাকা পরিশোধ করতে হয়। যেমন তিন কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে এর ওপর সারচার্জ দিতে হয় তাঁদের। এ ক্ষেত্রে এবারে দুই ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমত, তিন কোটি টাকার ওপরে সম্পদ থাকলেও কোনো আয় না থাকলে সারচার্জ দিতে হবে না। অর্থাৎ ন্যূনতম সারচার্জের বিধানটি বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ থাকলে তার ওপর ৩৫ শতাংশ সারচার্জ হিসেবে দিতে হয়।
দেশে অনেকগুলো বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করছে। এসব কোম্পানিতে কাজ করে অনেক বিদেশি নাগরিক। আবার বাংলাদেশও বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পে বিদেশি প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। কাজের সুবাদে বাংলাদেশে অবস্থান করায় এসব বিদেশি গাড়িসহ কিছু সম্পদ কিনে থাকেন। তাঁদের টিআইএন নিয়ে রিটার্ন দিতে হয়। এবার থেকে এসব বিদেশি কর্মীকে সম্পদের বিবরণও জানাতে হবে।
আগামী ১ জুলাই থেকেই রিটার্ন দেওয়া যাবে। শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে এখন থেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিতে থাকুন।

যেকোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।
দি জুরিস্টিক সলিউশন
০১৮১১১৬৩০২৮
অ্যাডঃ আরিফুর রহমান
১৪২ শাঁখারী বাজার,
জজ কোর্ট, ঢাকা
২৭ মতিঝিল ৩য় তলা

Go to home page