SLL:32) বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আইন, ২০১৮-তে বর্ণীত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ধারণা।

বিদ্যুৎ সংযোগ, মিটার স্থাপন, সংরক্ষণ , বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, বিদ্যুৎ চুরির দণ্ড, বিদ্যুৎ অপচয় করিবার দণ্ড, তল্লাশি, বিচার ও বকেয়া অর্থ আদায় ইত্যাদি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ আইন ২০১৮ তে যে সকল বিষয়ে আলোচনা আছে তা নিম্নে দেওয়া হলো:-

ধারা ১৫: বিদ্যুৎ সংযোগ:
কোন বাসগৃহ, স্থাপনা বা স্থানের মালিক বা বৈধ দখলদার অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ সাপেক্ষে বিতরণ লাইসেন্সি নির্ধারিত পদ্ধতিতে-

(ক) আবেদনে উল্লিখিত বাসগৃহ, স্থাপনা বা স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা করিবে; এবং
(খ) দফা (ক) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিদ্যুৎ লাইন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করিবে।

ধারা ১৭: মিটার স্থাপন, সংরক্ষণ :
(১) কোন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ নিরুপণের জন্য লাইসেন্সি গ্রাহকপ্রান্তে মিটার স্থাপন করিবে।
(২) মিটার সরবরাহ, মিটার স্থাপন, মিটার পরীক্ষা, মিটার রিডিং এবং তদ্‌সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে।
(৩) গ্রাহক মিটার যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য দায়ী থাকিবেন এবং তিনি মিটারে কোন অবৈধ হস্তক্ষেপ (tampering) বা ক্ষতি করিবেন না।
(৪) কোন গ্রাহক মিটার যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করিলে বিতরণ লাইসেন্সি নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক উক্ত গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিতে এবং তাহার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।
(৫) ভিন্নরূপ কোন কিছু প্রমাণিত না হইলে, কোন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ নিরুপণের জন্য মিটারের রেজিস্টার ও মিটারে সংরক্ষিত তথ্য সঠিকভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ রেকর্ড হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে এবং উহা সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্য হইবে।

ধারা ১৮: বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ:
(১) কোন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে ব্যর্থ হইলে অথবা কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করিলে, লাইসেন্সি নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক উক্ত গ্রাহক বা ব্যক্তির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিতে পারিবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হইলে কোন আদালত লাইসেন্সিকে উক্ত গ্রাহকের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ করিবার জন্য আদেশ দিতে পারিবে না।
(৩) বিদ্যুৎ বিল প্রণয়ন ও আদায়ের সহিত সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্মচারীর দায়িত্বে অবহেলার কারণে কোন বিল অনাদায়ী থাকিলে উহার দায় সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কর্মচারীর উপর বর্তাইবে।

ধারা ২০: বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ:
ধারা ১৮ বা ১৯ এর অধীন কোন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হইলে, নির্ধারিত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে, লাইসেন্সি সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ পুনঃসংযোগ করিবে।

ধারা ২২: অগ্রিম বিল প্রদান:
কোন গ্রাহক নির্ধারিত পদ্ধতিতে অগ্রিম বিল পরিশোধ করিতে পারিবে।

ধারা ২৩: সাময়িক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা:
(১) কোন গ্রাহক কোন কারণে সাময়িক সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখিতে ইচ্ছুক হইলে, তিনি উক্ত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিতরণ লাইসেন্সিকে লিখিতভাবে অবহিত করিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন অবহিত হইবার পর বিতরণ লাইসেন্সি উক্ত গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করিতে পারিবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন কোন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা হইলে, উক্ত গ্রাহককে বিদ্যুতের মূল্য ব্যতীত অন্যান্য চার্জ প্রদান করিতে হইবে।

ধারা ২৯: দুর্ঘটনার নোটিশ ও তদন্ত:
(১) বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, সরবরাহ বা বিতরণের ফলে কিংবা বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বা অন্যবিধ কার্যের ফলে কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়া থাকিলে অথবা ক্ষতি হইবার আশঙ্কা সৃষ্টি হইলে ক্ষেত্রমত ক্ষতিগ্রস্থ বা জ্ঞাত কোন ব্যক্তি উক্ত ঘটনা বা ক্ষতির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিতভাবে নোটিশ প্রদান করিতে পারিবেন।
ব্যাখা : এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কর্তৃপক্ষ বলিতে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শককে অথবা সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্দিষ্টকৃত কর্তৃপক্ষকে বুঝাইবে।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন নোটিশ প্রাপ্তির পর উক্ত কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত পদ্ধতিতে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করিবে।

ধারা ৩২: বিদ্যুৎ চুরির দণ্ড:
(১) কোন ব্যক্তি বাসগৃহ বা কোন স্থানে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করিলে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা চুরিকৃত বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করিলে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা চুরিকৃত বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

ধারা ৩৪: বিদ্যুৎ অপচয় করিবার দণ্ড:
কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ অপচয় করিলে বা বিদ্যুতের সরবরাহ ঘুরাইয়া দিলে অথবা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করিবার উদ্দেশ্যে কোন বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বা পূর্তকর্ম কাটিয়া দিলে বা ক্ষতিগ্রস্ত করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অন্যূন ১ (এক) বৎসর এবং অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড বা ৫(পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

ধারা ৩৫: বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চুরি, অপসারণ বা বিনষ্ট করিবার দণ্ড
কোন ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা উপকেন্দ্র বা স্থাপনার কোন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি অথবা বিদ্যুৎ লাইন সামগ্রী, যেমন-পোল, টাওয়ারের অংশ বিশেষ, কন্ডাক্টর, ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক তার, ইত্যাদি চুরি, অপসারণ, বিনষ্ট বা ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষতিসাধন করিলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অন্যূন ২ (দুই) বৎসর এবং অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ড এবং অন্যূন ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার এবং অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

ধারা ৪১: অপরাধ সংঘটনে সহায়তার দণ্ড:
কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা, ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনা করিলে এবং উক্ত সহায়তা, ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনার ফলে অপরাধটি সংঘটিত হইলে, উক্ত সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী বা প্ররোচনাদানকারী তাহার সহায়তা, ষড়যন্ত্র বা প্ররোচনা দ্বারা সংঘটিত অপরাধের জন্য নির্দিষ্টকৃত দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

ধারা ৪৪: একই অপরাধ পুনরায় সংঘটনের দণ্ড:
কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হইবার পর পুনরায় একই অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের দ্বিগুণ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

ধারা ৪৬: তল্লাশি:
(১) এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে লাইসেন্সির নিকট হইতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্যূন সহকারী প্রকৌশলী, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বা সমপদমর্যাদার কোন কর্মচারী নিম্নবর্ণিত যে কোন কাজ করিতে পারিবেন, যথা :-
(ক) যদি তাহার বিশ্বাস করিবার যুক্তিসংগত কারণ থাকে যে, কোন জায়গা বা অঙ্গনে অননুমোদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার হইতেছে, তাহা হইলে উক্ত জায়গায় বা অঙ্গনে প্রবেশ, উহার দরজা ভাঙ্গিয়া প্রবেশ এবং তল্লাশি করিতে পারিবেন; এবং
(খ) উক্তরূপ অননুমোদিত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, ক্যাবল বা অন্য কোন যন্ত্র জব্দ বা অপসারণ করিতে এবং সংশ্লিষ্ট কোন হিসাব বহি বা দলিল পরীক্ষা বা জব্দ করিতে পারিবেন।
(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন যে জায়গা তল্লাশি করা হইতেছে উহার মালিক বা তাহার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে উক্তরূপ তল্লাশি সম্পন্ন করিতে হইবে এবং জব্দকৃত জিনিসের একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া উক্ত ব্যক্তির এবং কমপক্ষে দুইজন নিরপেক্ষ ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করিতে হইবে।
(৩) তল্লাশি বা জব্দকরণের ক্ষেত্রে, যতদূর সম্ভব, ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।

ধারা ৪৯: বিচার:
(১) এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধানাবলি প্রযোজ্য হইবে।
(২) ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন-
(ক) এই আইনের অধীন অপরাধসমূহ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা, ক্ষেত্রমত, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য হইবে;
(খ) প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য এই আইনে বর্ণিত যে কোন অর্থদণ্ড আরোপ করিতে পারিবে।

ধারা ৫০: অপরাধের আমলযোগ্যতা, জামিনযোগ্যতা ও আপোষযোগ্যতা :
ফৌজদারি কার্যবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা ৩৩, ৩৫, ৩৮ এবং ৩৯ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য, অ-জামিনযোগ্য এবং অ-আপোষযোগ্য হইবে এবং ধারা ৩২, ৩৪, ৩৬, ৩৭ এবং ৪০ এর অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং আপোষযোগ্য হইবে।

ধারা ৫২: কোম্পানি কর্তৃক অপরাধ সংঘটন:
(১) কোন কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোন অপরাধ সংঘটিত হইলে, উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে উক্ত কোম্পনির এইরূপ মালিক, পরিচালক, নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, সচিব, অন্য কোন কর্মচারী উক্ত অপরাধ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে পারেন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে সংঘটিত হইয়াছে এবং উহা রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।
(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোম্পানি আইনগত সত্ত্বা হইলে, উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়াও উক্ত কোম্পানিকে পৃথকভাবে এই কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে, তবে উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে শুধু অর্থদণ্ড আরোপ করা যাইবে।
ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ‘‘কোম্পানি’’ অর্থে নিগমিত বা নিবন্ধিত হউক বা না হউক এইরূপ যে কোন কোম্পানি, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, অংশীদারী কারবার, সমিতি বা একাধিক ব্যক্তি সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন বা সংস্থা এবং সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা সরকারের সম্পূর্ণ বা আংশিক মালিকানাধীন কোন কোম্পানিও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে।

ধারা ৫৪: বকেয়া অর্থ আদায়:
আপাতত বলবৎ অন্য কোন আইন, দলিল বা চুক্তিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন গ্রাহকের নিকট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য মূল্য বা অন্য কোন অর্থ বকেয়া থাকিলে উহা Public Demands Recovery Act, 1913 (Bengal Act, No. III of 1913) এর বিধান অনুসারে সরকারি পাওনা হিসাবে আদায় করা যাইবে।

Go to home page