SLL: 27) "দেশজুড়ে ভয়াবহ সুনামি আঘাত হেনেছে। এগুলো জানলে মানুষ দেশ ছেড়ে পালাবে।..."বলছিলেন ভেজালযুক্ত খাদ্য সম্পর্কে।পলাশ মাহমুদ, নির্বাহী পরিচালক,‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)।

নিরাপদ খাদ্য নিয়ে এক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা হলো। তার মতে, খাদ্যে ভেজালের যে মহামারী চলছে তাতে দেশজুড়ে ভয়াবহ ‘সাস্থসুনামি’ আসন্ন। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আড়াই কোটি মানুষ কিডনী রোগী। প্রায় ৬ কোটি মানুষ লিভার রোগী। ক্যান্সার রোগী প্রায় ১৫ লাখ। বছরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ৩ লাখ। বর্তমানে দেশে কিডনী, লিভার ও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। আমি-আপনি এই সুনামির আঘাতের অপেক্ষায় আছি মাত্র।

আমরা কষ্টের টাকায় শ্রেফ বিষ কিনে পরিবারের মুখে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছি। ফলে রোগাক্রান্ত হচ্ছি আমি, আমার প্রিয় মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান বা ভাই-বোন। আর এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বছরে লাখ লাখ পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ তা উল্লেখ করে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, দেশে খাদ্য পণ্য, মাটি, পানি, বাতাস, মানুষ সবকিছুই পঁচে গেছে। দুর্গন্ধটাও ছড়ানো শুরু হয়েছে। সুনামির আঘাতে এই দুর্গন্ধ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ রক্ষা পাবে না।

কেন হচ্ছে?
এমন প্রশ্নে বিশেষজ্ঞের উত্তর: এমন কোনো খাদ্য পণ্য নেই যেখানে সমস্যা নেই। আমরা যেসব বিষয় পেয়েছি আর পাচ্ছি তা প্রকাশ করলে অনেক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষ এগুলো জানলে সামর্থ্য থাকলে দেশ ছেড়ে পালাবে। তবে সব পণ্যে যে, মানুষ ভেজাল দিচ্ছে এমন না। অনেকে না যেনেই নিজের ও জাতির ক্ষতি করছে। বেশি সমস্যা হচ্ছে আমাদের সিস্টেমেরে কারণে। যারা যেনেশুনে জাতির ক্ষতি করছে তারা প্রায় সবাই প্রভাবশালী ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান। সেকারণে বছরের পর বছর তারা জাতির সর্বনাশ করলেও ধরাছোয়ার বাইরেই থাকছে।

যেমন, ট্যানারির বর্জ্য দিয়ে পোল্টি ও ফিস ফিড তৈরি হচ্ছে। মুরগী, গরু বা মাছকে খাওয়ানো হচ্ছে এই খাদ্য। ফলে দ্রুত বড় হচ্ছে। কিন্তু এর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে ক্যাডমিয়াম, লেড, ক্রোমিয়ামের মতো ভয়াবহ হেভি মেটাল। এমনটি এখন চাউলেও এগুলো পাওয়া যাচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। কিন্তু ট্যানারির বর্জ্য নিয়ে বছরের পর বছর কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

কী করবো?
এই ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার শর্টকাট কোনো উপায় এখন নেই। এটি শিরায় উপশিরায় ঢুকে পড়েছে। শরীরে যেভাবে নতুন ব্লাড দিয়ে পুরনো ব্লাড পরিবর্তন করা হয় তেমনি আমাদের গোটা সিস্টেম আর সমাজ বদলে ফেলতে হবে। এজন্য সরকারকে সত্যিকার অর্থেই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে দেশজুড়ে দীর্ঘ মেয়াদে সামগ্রিক অপারেশন চালাতে হবে।

অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। পণ্য উৎপাদক, ব্যবসায়ী, প্রক্রিয়াকরণকারী, কৃষকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। জেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা গ্রাম পর্যন্ত কমিটি করে সচেতনতা সৃষ্টি ও তদারকি করতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষকে জানতে হবে কী হচ্ছে। আর এর ফলে নিজেরা কিভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। এজন্য দেশের যুবসমাজকে এগিয়ে আসতে সবার আগে।

ভোক্তা অধিকার সংস্থা ‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস) ও ‘কনজুমার ইয়ুথ বাংলাদেশ’ (সিওয়াইবি) কাজ শুরু করেছে।

আসুন আমরা নিজের যায়গা থেকে শুরু করি। প্রত্যেকে তার এলাকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করি। তাহলে পরিবর্তন শুরু হয়ে যাবে...

@@@@@@@@@@
পলাশ মাহমুদ,
নির্বাহী পরিচালক,
‘কনসাস কনজুমার্স সোসাইটি’ (সিসিএস)।

Go to home page