SLL: 101) “পুলিশি মামলার সাক্ষী হওয়ার সাতকাহন”

ফারুকের ফোনে হঠাৎ একটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসল,হ্যালো আমি ঢাকার সি এম এম কোটের ওসি বলছি আপনাকে কালকে সকাল ৯ টার মধ্যে আদালতে হাজির হতে হবে, একটি মাদক মামলায় আপনাকে পুলিশের পক্ষে সাক্ষী দিতে হবে।ফোনটি রাখারপর হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল সে,পুলিশ কেস মামলা বিষয়গুলো সাথে সে একদমই বেমানান।পেশাগতভাবে সে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের নিচে তার ছোট্ট একটা চায়ের দোকান আছে।স্ত্রী আর দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তার ছোট সংসার।
সে শুধু ভাবছে কিসের মামলার কথা বললো পুলিশ। কিন্তু কিছুতেই মিলাতে পারছে না সে।ভাবনার একপর্যায়ে তার মনে পড়ল ২০২০ সালের একটা ঘটনা।শীতের একরাতে সে প্রতিদিনের মতই দোকান করছিলো,দোকানের জন্য পানি আনতে গিয়ে আসার সময় দেখে দোকানের সামনে পুলিশের কয়েকজন সদস্য দাঁড়ানো, সাথে অল্পবয়স্ক এক যুবক তার হাতে হাতকড়া পরানো।
পুলিশ তাকে জিজ্ঞেসা করল এই দোকান আপনার? ফরিদ বললো জী স্যার। তারপর বললো আপনার নাম ঠিকানা বলেন, আমরা এই যুবককে হাতেনাতে ধরছি মাদকদ্রব্য সহ আপনার দোকানের পাশ থেকে, আপনাকে সাক্ষী হতে হবে।ফরিদ নিতান্তই সাদাসিধা মানুষ। পুলিশকে এই ব্যাপারে কিন্তু জিজ্ঞেসা করার সাহস তার হয়ে ওঠেনি।পুলিশ সাক্ষ্যর করতে বললে ফরিদ টিপসই দেয়, কারন লেখাপড়া জানে না সে আঙ্গুলের ছাপই তার সম্বল।
পরের দিন সে দোকান না খুলে আদালতের দিকে যাত্রা করে পরিবারের কাউকে বিষয়টি বলার সাহস হয়নি তার, কারন তারা চিন্তা করবে।আদালতের পথে যেতে যেতে নানান প্রশ্ন তার মস্তিস্কের এপাশ ওপাশ হতে থাকে কারন কোটকাচারির বারান্দায় আগে কখনও যাওয়া হয়নি তার।তারপর অনেক বিড়ম্বণার পর সে আদালত কক্ষে উপস্থিত হয়, তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তাকে ডাকা হলো সাক্ষীর কাঠগড়ায়। তার সামনে একটি যুবক দন্ডায়মান আসামীর কাঠগড়ায়। কয়েক বছর আগের সেই রাতের কথা সে ঠিকমত সব মনে করতে পারছিলো না।এরমধ্যেই শুরু হয়ে যায় আসামীপক্ষের উলিক আর মাননীয় বিচারকের প্রশ্নবান। কারন সে যে সাক্ষী, তার উপর ন্যায়বিচার অনেক অংশেই নির্ভর করছে।যেহেতু ফরিদ সরাসরি সেই রাতের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেনি তাই সে বেশিক্ষণ সেই প্রশ্নবানে টিকে থাকতে পারলো না।তাকে পুলিশের ও রোশানলে পড়তে হলো আদালতের ভর্ৎসনা শুনতে হলো আর অন্য দিকে আসামীপক্ষের উকিলের কথা না হয় বাদই দিলাম।
এখন আসল কথায় আসি,ঘটনা যখন ঘটে তখন ফরিদ ঘটনাস্থলে উপস্থিতই ছিলো না কিন্তু বিধিবদ্ধ আইনের নিময় তার নিয়তি হলো।পুলিশের দরকার সাক্ষী আদালতের দরকার প্রমাণ। ন্যায় বিচারের ব্যাপারে না হয় পরে আসি...
যে ঘটনা সে প্রত্যক্ষদর্শীই না সেই ঘটনার সাক্ষী হওয়া নেয়বিচারে পক্ষে না বিপক্ষে সে তা জানে না।আসামি যদি প্রকৃতপক্ষেই দোষী হয় তো ভালো যদি না হয় তাহলে তার সাক্ষীতে একজন নিরাপরাধ শাস্তি পেলে ফরিদ কি নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে?
দোকানদারি করাই তার জীবিকার একমাত্র উৎস, ন্যায়বিচারের সার্থে হলেও যে তাকে একবেলা দোকান বন্ধ করে এই কোর্টকাছারির চক্কর কাটতে হলো যার সাথে তার কোন সম্পর্কই নেই সেই উপার্জনের টাকা কে দিবে!
ধরে নেই ঘটনাটি সত্যিই, কিন্তু ২০২০ সালের ঘটনা ২০২২ সালে এসে সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘটনা যথাযথভাবে মনে রাখা এবং বিবাদীপক্ষের প্রশ্নবান থেকে রক্ষা করা কি একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে সত্যিই সাধারণ ব্যাপার? বিধি বাম হলে সেই প্রশ্নবানে জড়িয়ে যদি পুলিশি সাক্ষী ভেসে যায় তাহলে মিথ্যা সাক্ষী প্রদান করার শাস্তি কি সেই বিধিবধ্য আইন কিংবা পুলিশ ভাগকরে নিবে?
মূলকথা পুলিশের মামলার ক্ষেত্রে এইরূপ সাক্ষীগ্রহণ করার দায় আসলে কার!
সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিকেরই দায়িত্ব ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করা।কিন্তু এইরুপ বিধিবদ্ধ আইনের কিছু সীমাবদ্ধতার কারনে ন্যায়বিচার অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত হচ্ছে না,পুলিশ সাক্ষীর নামে মানুষ হয়রানীর শিকার হচ্ছে। এমতাবস্থায় উক্ত ক্ষেত্রে পুলিশ সাক্ষী গ্রহণের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ্য থেকে কিছু সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আসা এখন সময়ের দাবী।

এম কামরুজ্জামান জয়
এলএল.বি (অনার্স)
গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

হোমপেজ